উম্মে কুলসুম মৌ,দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধিঃ-
এ বছরের বোরো মৌসুমে দিনাজপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় (১৩) বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে।তিন লক্ষ চুয়াল্লিশ হাজার চারশো ত্রিশ হেক্টর আয়তনের দিনাজপুর জেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ দুই লক্ষ আটাত্তর হাজার চারশো সতেরো হেক্টর।কৃষি নির্ভরশীল এই জেলা ধান ছাড়াও আম-লিচু ও শাকসবজির জন্য প্রসিদ্ধ।এখানকার উৎপাদিত শাকসবজি প্রতিদিন ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।তবে এখানকার উৎপাদিত ধানের উৎপাদন মাত্রা ও গুণগত মানের সুখ্যাতি প্রবল।যা নিজ জেলার খাদ্য চাহিদা পূরণের পর সারাদেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে ইরি ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়েছে।কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করাচ্ছেন মাঠে।এরই মধ্যে আগাম জাতের ইরি ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে পুরোপুরি।দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার প্রায় প্রতিটি কৃষকের ঘর ধানে ভরে গিয়েছে।কাহারোল উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে এ বছর বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি তার মধ্যে হাইব্রিড রয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমি।গত বছরের লক্ষমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৪৩০ হেক্টর এবং ধান উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২৩ হাজার ৬১ মেট্রিক টন।এবারের বোরো চাষাবাদে কাহারোল উপজেলা সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বোরো চাষাবাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ পেয়েছেন কৃষকেরা একদম শুরু থেকেই।
কিন্তু এ বছর মৌসুমি খরার কারণে বোরো ধানের ফলন কম বলে জানান কৃষকেরা।দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার ৬ নং ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম সরঞ্জা গ্রামের কৃষক মোঃ খলিলুর রহমান জানান,”গত বছরের তুলনায় এ বছরে অনাবৃষ্টির কারণে ফলন কম হয়েছে আর খরচও বেশি।গত বছর একর প্রতি প্রায় ৭০ মণ আর এ বছর ৫৫ থেকে ৬০ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।”তিনি এ বছর ৫ একর জমিতে ধান চাষাবাদ করেছেন।ধানের বাজার মূল্য বস্তা প্রতি (২ মণ) ১৯০০ থেকে ২০০০ টাকা থাকা সত্বেও প্রতি বিঘায় (৫০ শতক) তাঁকে লোকসান গুণতে হবে অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বলে তিনি জানান।
প্রতি বিঘা (৫০ শতক) জমিতে ধান চাষাবাদের জন্য খরচ লাগে প্রায় ১৬/১৭ হাজার টাকার মতো।এর মধ্যে লাগে হালচাষ বাবাদ ২০০০/,চারা রোপণ বাবদ ১২০০/,সার প্রয়োগ বাবদ ৩০০০/,সেচ বাবদ ১৫০০/,বিষ ও আগাছামুক্ত কীটনাশক বাবদ ৪০০০/ এবং মাড়াই,কাটাই ও বহন খরচা বাবদ মোট ৪৫০০/।এছাড়াও আরও হাজার টাকার মতো খরচা যায় কৃষকের ধান বিক্রির জন্য ভ্যানে করে হাটে নিয়ে যাওয়া ও হাট খাজনা বাবদ।এত খরচের পরও কঠোর মেহনতের ফসল ঘরে তুলেও কৃষক পরিবার সন্তুষ্ট নয়।তাঁদের মুখের হাসিটা ক্রমশ মলিন হয়ে যাচ্ছে দুশ্চিন্তায়।কৃষক জীবনের লাভ-লোকসানের হিসাবের খাতায় সেই শূন্যই এসে দাঁড়ায় বারবার।
বর্গাচাষীদের অবস্থা আরও খারাপ।কারণ তাঁরা মালিকদের থেকে জমি চুক্তি নেওয়ার সময় কোনো বেসরকারি সংস্থা থেকে টাকা তুলে এরপর আরও হাজার হাজার টাকার খরচা জুটিয়ে কোনোরকম দুটো ডাল ভাত খেয়ে জীবনযাপন করে।আশা রাখে ফসল তুলে লাভবান হতে পারবে কিন্তু বাড়তি দামে সার-কীটনাশক ও বাকি আবাদি খরচ জুগিয়েও নেই কোনো উন্নতি।সারা মৌসুম হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও মানবেতর জীবনের ধাপ ডিঙিয়ে পার হতে পারেনি আমাদের কৃষক সমাজ।তাঁদের মুখে হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ নাহয় ধানের অপর্যাপ্ত দাম কিংবা কৃষি উপকরণের অত্যধিক মূল্যের দুশ্চিন্তা লেগেই থাকে সবসময়।যে কৃষক সমাজের উপর দেশের সকল মানুষের রোজকার পাতের আহার নির্ভর করে তাদের এমন শোচনীয় অবস্থা সত্যিই হতাশাজনক।
Leave a Reply